আমাদের সমাজে বর্তমানে এখনো অনেকেই আছেন যারা ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে অনর্থক কথা বলেন। ইসলাম নারীকে যথাযোগ্য মর্যাদা ও তাদের মেধা প্রয়োগের সুযোগ দিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। আলহামদুলিল্লাহ্ দ্বীনকে একটু একটু করে বুঝতে শেখার পরও দেখেছি, দ্বীনদার মহলেরও অনেকেই আছেন যারা সেকুলারদের তথাকথিত ফেমিনিজমের বলয় থেকে এখনো বেরোতে পারেন নি। তাঁরা এখনো মেয়েদের ঘরে থাকাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতে পারছেন না। ঘরোয়া নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে পারছেন না। আমার এই লেখাটা মূলত তাদের জন্যই লেখা ।
আমরা একটা কথা বারবার শুনি। আমাদের কানে একটা কথা প্রায়ই আসে, পড়ালেখা করে মেয়েরা কেন ঘরের গৃহিণী হবে? কেন তারা পৃথিবীতে সবার মাঝে তাদের যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারবে না? কেন তাদেরকে স্বামীর ঘরে বসে পঁচে মরতে হবে? কেন তাদেরকে সব সেক্টরে কাজের সুযোগ করে দিয়ে আমরা আমাদের উন্নতির পথকে সুগম করছি না?
বেগম রোকেয়া থেকে শুরু করে আজকের নারীবাদীরা, সবার মুখের ভাষার মূলত একটাই, মেয়েরা ঘরের বাইরে কাজ করে নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে। তাদের কথা হলো, একটা মেয়ে যদি ম্যাথ-ফিজিক্স, সাইন্স খুব ভালো পারে, তবে তার উচিত সেই মেধাকে ব্যবহার করা, ঘর বাড়ি, বাচ্চাকাঁচ্চা ও রান্নাবান্না নিয়ে পড়ে না থাকা।
আমাদের বর্তমান সমাজে মেয়েদের একটা বড় অংশই ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং-সাইন্স নিয়ে পড়ছে, উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছে। ঘরোয়া পরিবেশে যারা দ্বীনি ইলম চর্চা করছে তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম। যারা কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে তারা ছেলেদের সাথে পাল্লা দিচ্ছে, ক্লাসে ফার্স্ট-সেকেন্ড হচ্ছে, জব করছে, এসবের মাধ্যমে তারা নাকি নিজেদের মেধার ব্যবহার করছে। দ্বীন বুঝতে শেখার আগে এই কথাগুলো আমার কাছে লজিক্যাল ও যুক্তিযুক্ত মনে হত কিন্তু এখন বুঝতে পারি, সেক্যুলাররা এসব ফাঁপা বুলি দিয়ে আমাদের যা বোঝাতে চায় বাস্তবতা আসলে তা নয়।
আমার প্রশ্ন হলো , আমাদের দেশের গড়পড়তা একটা কর্মজীবী মেয়ে আসলে কী করে? একটা চাকরিই তো ! সেখানে সে ‘মেধার প্রয়োগ’ কতটুকু করে? অফিসে আটঘণ্টা কাজ, বসের ঝাঁড়ি, তার মনমত চলা এগুলোর মধ্যে আসলে মেধার প্রয়োগ কোথায় হয়? কতটুকু হয়? সেটা ভাবার বিষয়। এমন তো না যে এই মেয়েরাই দেশে উন্নতির জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে, সায়েন্টিস্ট হচ্ছে, গবেষক হচ্ছে।
বাংলাদেশের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যদি পুরো পৃথিবী নিয়ে গবেষণা করি তাহলে সারা বিশ্বের সায়েন্টিস্টদের মধ্যে কতজন নারী দেখতে পাবো ? মেয়েরা যদি এতটাই দক্ষতা ও যোগ্যতার অধিকারী হয় তাহলে ইতিহাসের শীর্ষ সাইন্টিস্ট, গণিতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদদের মধ্যে একজন নারী খুঁজে পেতে কেন আমাদের মাইক্রোস্কোপ লাগে? কাজেই ম্যাথ-ফিজিক্স ও সাইন্সে বিরাট প্রতিভাধর নারীরা গৃহপরিচারিকার হাতে সন্তানকে সঁপে দিয়ে যেখানে সীমিত বেতনে নটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত জব করে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরে, সেখানে তাদের মেধার খুব বেশি অংশ খরচ করতে হয় বলে কমপক্ষে আমরা মনে করি না।
এতো গেল সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডে যারা সায়েন্স ফিল্ডেই কাজ করেন তাদের কথা। আমরা একটু ভালোভাবে চারপাশে তাকালেই বুঝতে পারব অন্যান্য ফিল্ডে যারা আছেন তাদের কয়জন ইকোনমিকস ব্যাকগ্রাউন্ডের? আর যারা আছেনও, তাদের কয়জন নিজেদের অ্যাকাডেমিক শিক্ষাকে জব ফিল্ডে কাজে লাগান? এছাড়া বাংলা বা দর্শন থেকে পাশ করা মেয়েরা যে সুদী ব্যাঙ্কে রিসিপ্ট সই করছেন, তাতে তাদের কোন মেধার প্রয়োগটা হয় আমাদের সেটা বুঝে আসেনা ?
সেক্যুলারদের কথা শুনলে মনে হবে নারীরা মেধাবী বলেই তাদের চাকরিতে নেওয়া হয়। কথাটা যুক্তিযুক্ত বলে আমরা বিশ্বাস করি না !! কারন সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েদের সবচে বেশি দেখা যায় কর্পোরেট জবগুলোর রিসিপশনে, ফ্রন্ট ডেস্কে, টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকা হিসেবে। এসবে বিবেচ্য কোন ‘মেধা’ নয়! রূপ-কণ্ঠ এবং নিজেকে বসের নির্দেশ অনুসারে কে কিভাবে পোশাক পরাতে পারেন তার উপরই ডিপেন্ড করে এইসব সোশ্যাল জব ও চাকরিগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের ভেতরের খবর আমাদের ভালোই জানা আছে। সমাজের সামনে আজ স্পষ্ট, বিজ্ঞাপনে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সুড়সুড়ি দিতে স্বল্পবসনা নারীরা কোন মেধার বলে চান্স পায়? সচেতন ব্যক্তিরা সবাই বোঝেন, মোবাইল অপারেটর সেক্টরে রেকর্ডকৃত নারীর কণ্ঠ কোন মেধার পরিচায়ক?
আমাদের মনে রাখা উচিত, মেধা হল আল্লাহ্ তায়ালা প্রদত্ত কতগুলো গুণের সমষ্টি । বোঝার যোগ্যতা , জিনিসের ধারণক্ষমতা, স্কিল, ব্রেইন মেমরি ইত্যাদি অনেকগুলো ব্যাপারকে আমরা একত্রে ‘মেধা’ বলি। এগুলোর কোনটি আল্লাহ তায়ালা কাউকে কম দেন, আবার কাউকে বেশি দেন, নিজস্ব চেষ্টা-প্রচেষ্টা, দক্ষতা ও ব্যবহারের মাধ্যমে সেগুলোকে বাড়িয়ে নিতে হয়। এই মেধা একটা আমানত, যেটা আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দিয়েছেন এবং আল্লাহ্র কাছেই আমাদেরকে এই আমানতের হিসাব দিতে হবে।
ইসলামিক পড়াশোনাটা বায়োলজি বা ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মোটেই সহজ না, বরং অনেকক্ষেত্রেই বেশি কঠিন। এই পড়ার জন্য মেধা, ধৈর্য্য ও অধ্যাবসায়ের অনেক বেশি দরকার। ইমাম বুখারী- ইমাম তিরমিযী- ইমাম গাজ্জালীদের (রহ

আশ্চর্যজনক মেধা ও ফটোগ্রাফিক মেমরি নিয়ে অসংখ্য কাহিনী প্রচলিত। আমার মনে পড়ে শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম ( রহ: ) একটা কথা বলেছিলেন, ইসলামী ফিক্বহ নিয়ে পড়া উচিত সবথেকে মেধাবী ছাত্রদের।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো , এই জায়গাটায় মেধা খাটানোর কথা আমরা ভাবতে পারি না। আমাদের মেয়েরা এত এত মেধাবী বলে আমরা গলা ফাটাই, অথচ আমাদের সামনে আজ স্পষ্ট , ইসলামের মূল ও বেসিক বিষয়গুলোতে তাদের না জানার পাল্লাটা ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশি। ইসলামী বিষয়ে মোটামুটি জ্ঞান রাখেন এমন পুরুষ হয়তো অনেকেই আছেন, কিন্তু নারীদের মধ্যে কয়জন কুরআন-সুন্নাহর মিনিমাম প্রয়োজনীয় জ্ঞানটুকু রাখেন সেটা দেখার বিষয় ?
আমাদের সমাজের মেয়েরা তাদের মেধার প্রয়োগ ইসলামীক ক্ষেত্রে না করে এমন কিছু ক্ষেত্রে করেন, যা আখিরাত তো দূরের কথা, দুনিয়াতেও তাদের বিশেষ কোন কাজে আসে না। এই মেধার আসলে কতটুকু মূল্যায়ন সম্ভব? শুধু কি সেক্যুলার অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি দিয়েই মেয়েরা খুব উচ্চশিক্ষিত হচ্ছে বলে সিদ্ধান্তে আসা যায়?
আসুন আমরা একটু বাস্তবতার দৃষ্টিতে দেখি আমাদের মেয়েদের অবস্থা । আমাদের সমাজের একজন গড়পড়তা তরুণীর দিনের একটা বড় অংশ কাটে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তোলা, সে ছবি আপলোড দেওয়া এবং ছবি তোলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে করতে। দিনের বাকি অংশ কাটে গালগল্প করতে , কে কী পড়লো? কার কতটুকু ম্যাচিং হয়নি? সে হিসেব করতে করতে। এছাড়া ফেসবুক, ইউটিউব, ভারতীয়-ইংরেজি সিরিয়াল, নাটক আর মুভি এসব তো আছেই। আর বয়ফ্রেন্ড থাকলে তো কোন কথাই নেই। সারাদিন ফোন, চ্যাটিং, মেসেজ আর কথা বলার মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হয় তাদের মূল্যবান সময়গুলো। আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় ভার্সিটিগুলোর মেয়েরা, যাদের আমরা খুব ‘মেধাবী’ বলেই জানি, খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদেরও বেশিরভাগ সময় এভাবেই কাটে। এসব আজেবাজে ও ফালতু কাজ কোন ‘মেধা’র পরিচায়ক আমাদের জানা নেই।
বিয়ের পরেও মেয়েদের এই রুটিনে খুব বেশি একটা পরিবর্তন আসে তা না। হ্যাঁ, জব করতে গিয়ে তারা হয়তো বিনোদনের সময়টা একটু কম পায় তবে ভারতীয় সিরিয়াল আর পাশের বাড়ির ভাবীর সাথে অমুক ভাবীর আলোচনা করে ভালোই টাইমপাস হয় তাদের ।
বিজ্ঞজনদের অবশ্যই জানা আছে যে, দুজন নারী কথা বলবে আর তৃতীয় কাউকে নিয়ে আলাপ হবে না এতো ভাবাই যায় না ! তাদের আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়েই থাকে নিজেদের উন্নতি, অগ্রগতির আলোচনা বাদ দিয়ে বিবাহ পরবর্তী নিজেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো কাটানোর কথা। আর বেশিরভাগ সময় তাদের আলোচনাগুলো সংসারের সমস্যাগুলোকে হতাশা বাড়ানোর উপকরণ হিসেবে জন্ম দেয়, কেন অমুক ভাবী এত দামী শাড়ি পড়ে আর আমি এত কমদামি শাড়ি পড়ি ইত্যাদি রকমের শত আক্ষেপেই তাদের জীবনের অর্ধেক আনন্দ মাটি হয়ে যায়।
আসুন! এবার একজন বিবাহিতা প্র্যাক্টিসিং মুসলিমাহ গৃহিণী নারীর কথা চিন্তা করি। কিভাবে তার পুরোটা দিন অতিবাহিত হয় সেটা নিয়ে ভাবি। একজন দ্বীনদার রমনী প্রতিদিন ইসলাম স্টাডি করেন যথাসাধ্য, ইসলামের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করেন নিজের অবসরে ,বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ করেন নিয়মিত, স্বামী-সংসারের দেখভালে প্রতিনিয়ত কুরআন-সুন্নাহর হেল্প নেন, সংসারের সব সমস্যাগুলো ইসলামের জ্ঞান দিয়ে সমাধান করেন, স্বামীকে সৎকাজে প্রেরণা দেন, যেকোনো ধরনের অশ্লীল ও বাজে কাজ থেকে তাকে বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকেন, তাকে ভালো ও সুন্দর পরামর্শ দেন, সংসার সামলাতে প্রচুর ধৈর্য্য আর বিচক্ষণতার সাথে কাজ নেন। প্রেরণা গ্রহণ করেন ইসলামের ইতিহাসের আলোকিত নারীদের কাছ থেকে। পাশের বাড়ির ভাবীর সাথে আলোচনার বিষয় হয় অমুক আলেমের অমুক বইটা পড়েছেন কি না? আর কুরআন ও হাদীস কার কতটুকু মুখস্থ হল তার আপডেট নিয়ে।
এখন বলুন , এই দুই শ্রেণীর নারীর মধ্যে কে বেশি মেধাবী? কে বেশি ‘মেধার প্রয়োগ’ রাখেন?কার জীবনটা সুন্দর ও পরিশীলিত? বাঁদরের ভঙ্গিতে হাজার সেলফি তোলা মেয়েটির হয়তো হায়ার ডিগ্রি আছে, পার্মানেন্ট জবও সে করে। আর ‘ঘরে আটকে থাকা’ মেয়েটির হয়তো এত ডিগ্রিও নেই, সে জবও করে না অথচ তাদের দৈনন্দিন কাজগুলো আমাদের বলে দেয়, কে মস্তিষ্ক ব্যবহার করে আর কে করেনা? কে নিজের জীবনকে সুন্দর করতে বদ্ধপরিকর আর কে দুনিয়ার চাকচিক্য ও বিলাসিতা দেখে হারিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের অতল গহবরে? হ্যাঁ, এটাকেই আমরা মেধার প্রয়োগ বলি। আলহামদুলিল্লাহ!! আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ঘরোয়া পর্দানশীল নারীরা সেকুলারদের কর্পোরেট মেয়েদের চেয়ে শতগুণ বেশি মেধাবী ও বুদ্ধিমান ।
আমরা দেখছি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় সেক্যুলারকরণের সাথে সাথে মেয়েদেরকে পুরুষের ‘সমান’ বানাবার এক অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা লেগে গেছে , তাদের চাহিদা জাগছে, ছেলেদেরকে এবং মেয়েদেরকে একই সাবজেক্টে, একই মেথডে, একই জায়গায়, একই সাথে পড়াশোনা করতে হবে, এরপর জব ফিল্ডেও তাদের একইভাবে নেওয়া হবে কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে সবসময় চাওয়া হবে ছেলের পজিশন যেন থাকে মেয়ের ওপরে ।
খোঁজ নিলে বুঝা যাবে বাংলাদেশে আজ লাখ টাকা বেতনের চাকরি করা মেয়ে কয়জন আছে ? কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে দেখা যায় স্বল্প বেতনের মেয়েটিও আজ লাখ টাকা বেতনের ছেলে খোঁজে বিয়ে করার জন্য। মেয়েটির কোন উপার্জন না থাকলেও উচ্চ পদের ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়ে যায় স্বাভাবিকভাবে কিন্তু ছেলেটির উপার্জন না থাকলে তার বিয়ে হবে না বছরের পর বছর চলে গেলেও।
আমরা যতই চিৎকার ও চেঁচামেচি করি না কেন মানুষকে একটা পর্যায়ে গিয়ে নিজের স্বভাবজাত চাহিদা ও ফিতরাতের কাছে আত্মসমর্পণ করতেই হয়। বিয়ের পর ছেলেটিই মেয়েটির দায়িত্ব নেবে, তাকেই সংসার চালাতে হবে, এটাই বাস্তবতা । এসব মানুষ পাল্টাতে পারে না, কারণ এর বিপরীতটা হলেই সমাজের ভিত্তি নড়ে উঠবে, সামাজিক অবক্ষয় নেমে আসবে এবং সুন্দর সংসারগুলো ধ্বংস হবে । কিন্তু আফসোসের কথা হলো, এই পর্যায়টির কথা ভেবে সমাজের আগের স্টেজগুলো ও স্টেপগুলো গড়ে তোলা হয় না, সবখানে জোর করে নারী-পুরষকে ‘সমান’ বানানোর প্রচেষ্টা, শেষে গিয়ে খাপ না খাওয়াতে পেরে আমাদের নিজেদেরই ব্যালেন্স নষ্ট করা অবস্থা।
আল্লাহ্ তায়ালা নারী-পুরুষকে আলাদা করে বানিয়েছেন, সমাজে তাদেরকে আলাদা আলাদা ভূমিকা দিয়েছেন। এই পৃথক ভূমিকার জন্য প্রত্যেক ছেলে এবং মেয়েকে গড়ে তোলাটাই আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও পরিবেশের জন্য যৌক্তিক ছিল কিন্তু ‘ছেলেদের যা পড়তে হবে মেয়েদেরও ঠিক তাই তাই পড়তে হবে’- এমন একটা জবরদস্তিমূলক মানসিকতা আমাদের নারীদের সেই ‘নারীত্ব’কে বিনষ্ট করে দিতে চায়, ফলাফল হিসেবে আমরা আজ দেখছি সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার জীবনে ভাঙ্গনের উপাখ্যান।
‘মেধার প্রয়োগ’ ঘটানোর কথা বলে পাশ্চাত্যবাদী ও সেক্যুলারপন্থীরা মূলত আমাদের মেয়েদের দাস বানাতে চায়, আমরা তাদের চাহিদার মুখে পদাঘাত করি। এইজন্যই আমাদের প্রতি তাদের এত রাগ। আমাদেরকে বুঝতে হবে, একটা মেয়েকে বিয়ের পর অনেকগুলো কঠিন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া, দ্রুত ম্যাচিউর হবার তাড়না থাকে, যদি চারপাশের লোকেরা হেল্পফুল না হয় তবে তো কথাই নেই। এরপরেই আছে সন্তান ধারণ, সুষ্ঠুভাবে তার প্রতিপালন । একাজগুলো সাফল্যের সাথে করতে গেলে নিজের মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটানো ব্যতীত কোন বিকল্প নেই। এর জন্য সীমাহীন ধৈর্য্য, চরম অধ্যবসায়, মানসিক বিচক্ষণতা, সীমাহীন ত্যাগ, কঠোর আত্মনিয়ন্ত্রণ আর অন্যান্য মানবিক গুণাবলির সমাহার প্রয়োজন।
মায়েদের মর্যাদার কথা কেন এতবার আসে সেটা আমরা নিজেদের মায়ের কথা ভাবলেই বুঝতে পারি । তিনিও গৃহিণী। তাঁকে দেখেই বুঝা যায় আদতে সংসার সামলানোর এই কাজটা কতটা কঠিন। আশ্চর্য হলো, নারীবাদীদের চোখে সংসার করা নাকি মেধার অপব্যায়! গৃহিণী নারীরা নাকি কাজ না করে ঘরে বসে থাকেন!!
এই মেন্টালিটির রেজাল্টটা আজ আমরা খুব সহজেই পেতে বসেছি। আজকে আমাদের ঘরে ঘরে ঐশীদের মত একটা প্রজন্ম গড়ে উঠছে যারা নিজেদের বাবাকে কুপিয়ে মারে, মাকে গুলি করে। বিপথগামী ছেলেমেয়ের দিকে তাকিয়ে আজ আমাদের বাবা-মা রা কপাল চাপড়ায় ! আফসোস করে কেন আমরা সময় থাকতে নিজেদের প্যারেন্টিংকে গুরুত্ব দেই নি?কেন আমাদের সন্তানদেরকে দ্বীনি শিক্ষায় গড়ে তুলিনি?
প্যারেন্টিং কাজটা আসলে খুবই কঠিন। একটা সন্তানকে আল্লাহ্র অনুগত বান্দারূপে গড়ে তোলা অনেক শক্ত কাজ। ক্ষণিকের একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য নিজেদেরকে মাসুল দিতে হয় আজীবন। অথচ আজ আমাদের বলা হচ্ছে, এই কাজটিতে নাকি মেধার প্রয়োগ নেই!! আমাদেরকে বোকার মত বোঝানো হচ্ছে, মেধার প্রয়োগ কেবল ভারী ভারী বই গলধঃকরণে!!
জাফর ইকবাল ম্যাথ অলিম্পিয়াডে মেয়েদের অংশগ্রহণকে মেধার মাপকাঠি মানেন। আমাদের সুশীলরা নারীদের ক্রিকেট-ফুটবল আর অলিম্পিকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়াকে তাদের গৌরবের কারণ বলে মনে করেন! আমরা এটা মানি না! আমাদের বিশ্বাস, একজন মেধাবী নারী মানে একজন পূণ্যময়ী সফল স্ত্রী। একজন মেধাবী নারী মানে একজন আদর্শবান সফল মা। আজকের সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থায় ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়া ‘মেধাবী’ মেয়েরা স্ত্রী-মায়ের ভূমিকায় একের পর এক ব্যর্থ হলেও তাদের গুণগানে মুখরিত সমকালীন নারীবাদী সমাজ! কারণ তাদের দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করাটা আজ বড্ড সহজ তাদের কাছে !!
গৃহিণী মুসলিম নারীদের প্রতি সেক্যুলারদের খুব রাগ। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে জব ফিল্ডের ব্যাকগ্রাউন্ডসহ সবকিছুতেই তারা চায় মেয়েদেরকে নিজেদের হাতের পুতুল বানাতে। এরপরও কিছু পর্বতহৃদয় নারী নিজেদের অসীম ধৈর্য্য ও সাহস দেখিয়ে তাদের দেখানো চাকচিক্যের তোয়াক্কা না করেই আল্লাহ্র সন্তুষ্টির আশায় স্বামী-সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। এই মেয়েরাই তৈরি করেন একেকজন সিংহপুরুষ।
এই পাশ্চাত্যবাদী ও সেক্যুলারপন্থীরা পার্থিব অর্জনের সীমাহীন লোভ ও মোহের জাল বিছিয়ে এই মুত্তাকী নারীদের কিনতে পারে না বলেই ‘ঘরে আটকে থাকা’, ‘মেধার অপচয়’ সহ হাজাররকম কুৎসা আর নিন্দার ঝড় তুলে নিজেদের ছদ্মবেশী মুখে। এর মূলে রয়েছে তাদের গায়ের জ্বালা, ক্ষোভ আর হিংসে। হ্যাঁ, আমাদের মেয়েরা ‘ঘরে আটকে থেকে’ই পৃথিবী জয় করবে ইনশাআল্লাহ্। আমাদের মায়েদের গড়ে তোলা সিংহরাই জমিনের বুকে আবার কালিমার পতাকা উত্তোলন করবে বিইযনিল্লাহ। ইনশাআল্লাহ সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন খাদিজা, আয়েশা ও ফাতেমাদের ( রাযিআল্লাহু আনহুন্না) মত পূর্ণবান মহিলাদের আদর্শে আবার অনুপ্রাণিত হবে পাশ্চাত্যের মহিলা সমাজ।
ডিয়ার সেকুলার ও পাশ্চাত্যবাদীরা !!
পরিশেষে আমরা তোমাদের জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহ তায়ালার দরবারে হেদায়েতের দুয়া করতে পারি। যদি তোমরা নিজেদের চিন্তাভাবনাকে পরিমার্জিত করতে চাও তাহলে তোমাদের জন্য রইলো শুভকামনা। আর যদি নিজেদের গোঁড়ামি ও অশ্লীলতায় ডুবে থাকো তাহলে তোমাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত :
ان الذین یحبون ان تشیع الفاحشة فی الذین امنوا لهم عذاب الیم فی الدنیا و الآخرة۔
নিশ্চয়ই যারা চায় মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ও ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ( সূরা নুর : আয়াত ১৯ )
★ ইমতিয়াজ বুরহান